।। শাহজাহান চৌধুরী শাহীন।।
ঝাউবাগানের মাথায় যখন ছায়া ফেলে রোদ, আর নরম বালিতে পা ফেলে যখন মানুষ এগিয়ে যায় সাগরের দিকে—তখন কক্সবাজারের শৈবাল পয়েন্ট যেন হয়ে ওঠে স্বপ্নের ঠিকানা।
এমনকি ব্যস্ত জীবনের অবসরে কিছুটা প্রশান্তি খুঁজে নিতে অনেকেই ছুটে আসেন এখানেই। কিন্তু এখন সেই স্বপ্নের ঠিকানাই হারিয়ে যাওয়ার পথে—সাগরের গর্ভে।
প্রতিদিনের জোয়ারে উত্তাল হয়ে ওঠা বঙ্গোপসাগরের ঢেউ আঘাত হানছে এই পয়েন্টে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা জিও ব্যাগগুলো এই ভাঙন ঠেকানোর জন্য বসানো হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু প্রকৃতির প্রবল স্রোতের কাছে তা এখন প্রায় অকার্যকর। ঢেউয়ের তীব্রতায় ব্যাগগুলো ছিটকে গেছে, অনেকে বিলীন হয়ে গেছে সাগরের নীচে।
ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে ঝাউবাগানে। জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে বাগানের ভিতর পর্যন্ত। একটির পর একটি গাছ উপড়ে পড়েছে। পর্যটকদের চলাচলের জন্য যে পথটি ছিল, তাও এখন সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে, হয়ে পড়েছে অনুপযোগী। সৈকতের নিচের অংশে নেমে যাওয়ার কোনো নিরাপদ রাস্তা আর অবশিষ্ট নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা জুয়েল একরাম, মো. ফারুক, দিদারুল আলম সিকদার সহ অনেকে বলছেন, প্রতিবছরই ভাঙনের ঘটনা ঘটে, তবে এবারের পরিস্থিতি যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন। শুধু সৈকতের সৌন্দর্য নয়, হুমকির মুখে পড়েছে এখানকার জীববৈচিত্র্য, অর্থনীতি ও পর্যটনখাত।
সৈকতের ব্যবসায়ী হাসান আলী ও মোশারফ হোসেন দুলাল বলেন,“প্রতিদিন এখানে অনেক ব্যবসায়ী দোকান খুলেন, কিটকট চেয়ার বসান, কিন্তু এখন পর্যটকই আসে না। ভাঙনের ভয়ে অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করেছে।”
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক আসিফুর রহমান বাপ্পী বলেন,“শৈবাল পয়েন্ট ছিল আমার প্রিয় জায়গা। এখন দেখে খুব কষ্ট লাগে। ভাঙনের দৃশ্য চোখে দেখা যায় না।”
এমন বাস্তবতায় স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী ও পর্যটকরা এক কণ্ঠে দাবি জানাচ্ছেন—দ্রুত শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। শুধু ক্ষণস্থায়ী প্রতিরক্ষা নয়, দরকার টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, সৈকতের ভাঙ্গন ঠেকাতে শহর রক্ষাবাঁধসহ একটি দীর্ঘ মেয়াদি টেকসই প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।
এই ভাঙন যেন শুধুই একটি সৈকতের নয়, বরং পুরো কক্সবাজার শহরের অস্তিত্ব সংকট।
দেশের প্রধান পর্যটন শহরটি যদি এভাবে ভেঙে যেতে থাকে, তাহলে আগামী প্রজন্ম হয়তো বইয়ের পাতায় পড়বে,‘একসময় এখানে শৈবাল পয়েন্ট নামে এক অপূর্ব সৈকত ছিল।’