
নিউজ ডেস্ক, সিবিসি নিউজ :
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাধারণ জনতা ও ছাত্র হত্যার মামলায় কক্সবাজার জেলা আওয়মীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, মেয়র মাহবুবুর রহমানসহ অধিকাংশ নেতা-কর্মীরা পালিয়ে গেলেও কিছু সংখ্যক নেতাকর্মী এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
প্রশাসনের গ্রেপ্তার কার্যক্রম না থাকায় এলাকায় এসব নেতাকর্মীরা পূর্বের মতই দাপটে চলাফেরা করছে এবং পূর্বের ন্যায় নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এমনই একজন হচ্ছেন টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার, আওয়ামী লীগ নেতা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ( সাবেক) মাহবুবু রহমান, টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলমসহ একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার অর্থ যোগানদাতা আমান উল্লাহ আমান।
তিনি বাহারছড়া ইউনিয়নের উত্তর শীলখালী এলাকার মৃত শফিকুল ইসলামের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয় রয়েছে। এখনও তিনি বাহারছড়া শীলখালী এলাকায় নানা ধরণের অপকর্ম চালিয়ে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তার বড় ভাই ছৈয়দুল ইসলাম প্রকাশ ছুদু ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজী দখলবাজিসহ নীরিহ মানুষের উপর জোর জুলুম চালিয়ে আসছিল তারা দুই ভাই। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাদের অপরাধ দীর্ঘ হলেও রাজনৈতিক পরিচয় ও ক্ষমতার দাপটের কাছে অসহায় ছিল জুলুমের শিকার সাধারণ মানুষ।
অভিযোগে জানা যায়, ২০২২ সালে ২৬ জানুয়ারী সকালে উক্ত আমান উল্লাহ তার ভাই আওয়ামীলীগ নেতা
ছৈয়দুল ইসলাম প্রকাশ ছুদুর নেতৃত্বে উত্তর শিলখালী গ্রামের মাঝের পাড়ার পশ্চিমে প্রস্তাবিত নারিশ কোম্পানীর একোয়া শ্রিম্প হ্যাচারীর মধ্যে অনধিকার প্রবেশ করে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। চাঁদাবাজিও করা হয়। এসময় উত্তর শিলখালী ৩নং ওয়ার্ডের মৃত মুহাম্মদ সোলাইমানের ছেলে হেলাল উদ্দিনকে কুপিয়ে আহত ও আঙ্গুল কেটে নেয়া হয়।
এঘটনায় ২৭ জানুয়ারী টেকনাফ থানা আমান উল্লাহ, তার ভাই ছৈয়দুল ইসলাম প্রকাশ ছুদুসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে আহতের ভাই আবছার উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। টেকনাফ থানার মামলা নং-৮৮,জিআর-৮৮/২০২২।
এঘটনায় আমান উল্লাহ মেম্বার গ্রেফতার হয়ে কয়েক মাস জেল খাটেন। তার ভাই ছৈয়দুল ইসলাম প্রকাশ ছদু আওয়ামী লীগের দাপট দেখিয়ে গ্রেফতার এড়িয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানায়, আমান উল্লাহ ৩নং ওয়ার্ডে মেম্বার নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বড় বড় আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রভাব দেখিয়ে এলাকায় ত্রাশ চালিয়েছে।নিরীহ মানুষজনকে বিচারের নামে ধরে এনে বেঁধে নির্যাতন চালানোর অসংখ্য ঘটনা ঘটিয়ে আওয়ামীলীগের ক্ষমতা দেখিয়ে পার পেয়ে যায়। এই আমান উল্লাহ বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসায় পৃষ্টপোষকতার অভিযোগও এলাকায় প্রচার আছে।
সম্প্রতি কোস্ট গার্ডের হাতে বিপুল পরিমাণ একটি ইয়াবার চালান আটক হয়। এই ইয়াবা চালানের ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা আছে বলে একটি খবর এলাকার মানুষের মুখে মুখে।
সুত্রে আরও জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা আমান উল্লাহ মেম্বারের ভাই আওয়ামীলীগ নেতা ছৈয়দুল ইসলাম প্রকাশ ছদু ২০২২ সালে একোয়া শ্রিম্প হ্যাচারী লিঃ নারিশ কোম্পানির মাটি কাটার কাজে নিয়োজিত এস্কেবেটর ভাংচুর করা হয়। চাঁদাবাজি মারধর, হামলার ঘটনাও ঘটায়। এব্যাপারে একোয়া শ্রিম্প হ্যাচারী লিঃ নারিশ কোম্পানির স্টোর অফিসার মো. রাশেদুল ইসলাম বাদী হয়ে আমান উল্লাহ সহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করে। টেকনাফ থানার মামলা নং-৭৮, জিআর-৩৭৮, তাং-২৬।৪।২০২২ইং।
এঘটনায় আমান উল্লাহ সহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করে তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর নুর মোহাম্মদ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ আরও প্রকাশ, ২০২৪ সালের ১৬ মার্চ বে-আইনী জনতা নিয়ে মারাত্মক অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এক ব্যক্তিকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে সাধারন ও গুরুতর জখম করতঃ অপহরণ পূর্বক চাঁদা দাবী ও চাঁদা আদায় সহ ক্ষতিসাধন করে হুমকি প্রদর্শনের অপরাধ। এসময় ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করার অভিযোগ আনা হয়। এঘটনায় হ্নীলা পানখালী এলাকার জাফর আলমের ছেলে মো. আলম বাদী হয়ে হ্নীলা ইউনিয়নের ফুলের ডেইল গ্রামের সাবেক সাংসদ মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদ মাহমুদ আলী ও বাহাছড়া ইউনিয়নের শীলখালী গ্রামের আ.লীগ নেতা ছৈয়দুল ইসলাম প্রকাশ ছদুসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
মামলা নং-৬০, জিআর-৬৬৫। তাং-২০।১১।২০২৪ইং।
এদিকে, ডেভিল হান্ট অভিযানের আওতায় নৌ বাহিনী বিশেষ অভিযান চালিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে যুবলীগ নেতা ছৈয়দুল ইসলাম প্রকাশ ছুদুকে গ্রেফতার করে। বতর্মানে ছৈয়দুল ইসলাম কারাগারে আছেন।
স্থানীয় সুত্রে আরও জানা গেছে, গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ নেতা আমান উল্লাহ ও আ.লীগ নেতা ছৈয়দুল ইসলাম প্রকাশ ছুদু এবং বাহারছড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড যুবলীগের সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ আলম গ্রুপ মিলে এলাকায় দুঃশাসন, নিপীড়ন আর নির্যাতনে অতিষ্ঠ ছিল সাধারণ মানুষ। নারিশ কোম্পানীর একোয়া শ্রিম্প হ্যাচারীর মধ্যে অনধিকার প্রবেশ করে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামী এই ঢ়ুবলীগ নেতা মোহাম্মদ আলম।
ওই সময় তাদের দাপটে সাধারণ মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা ছিল না। দীর্ঘদিন পর মানুষ এখন সমবেত হয়ে কথা বলতে পারছে।
টেকনাফের সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌরসভা মেয়র মাহবুবুর রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলমসহ আওয়ামীলীগ নেতাদের অপকর্মে অর্থ যোগানদাতা তারা।
বিভিন্ন সময় এলাকায় ভুমি দস্যুতা, চাঁদাবাজি, লুটপাট, নীরিহ মানুষের জনের উপর ন্যাক্কার জনক হামলা ঘটনা ঘটালেও এদের দাপটের কারণে নির্যাতিতরা আইনের আশ্রয় নিতে পারেনি।
বাহারছড়া ইউনিয়নের শীলখালী এলাকায় আওয়ামী লীগের দোসর আমান উল্লাহ মেম্বার, যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ আলম আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সে সহ তাদের ষনুসারীরা এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তাদেরকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা জরুরী বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
এব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ নেতা আমান উল্লাহ মেম্বারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।