০৩:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

বদনজর লাগছে কীভাবে বুঝবেন? করণীয় কী?

সিবিসি নিউজ ডেস্ক।। 

ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী মুমিনের জন্য পরীক্ষার হলের মতো। পরকালে সফল হতে অবশ্যই এই পরীক্ষায় সফলকাম হতে হবে। এরপরই মিলবে কাঙ্ক্ষিত জান্নাত। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘জমিনের ওপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোর শোভাবর্ধন করেছি, যাতে আমি মানুষকে পরীক্ষা করতে পারি যে, আমলের ক্ষেত্রে কারা উত্তম।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত: ৭)

অনেক সময় নানা ধরনের বিপদ-আপদের মাধ্যমেও মহান রাব্বুল আলামিন বান্দার পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। কখনো এটি হতে পারে শারীরিক কোনো রোগ-ব্যাধি দিয়ে, আবার কখনো জীবন বা সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে। এ জন্য পরকালে সফল হতে মহান আল্লাহর হুকুম যেমন মেনে চলা জরুরি, তেমনি রাসুল (সা.) এর আদর্শ ও তাঁর দেখানো পথ অনুসরণও জরুরি।

এ ক্ষেত্রে বদনজর লাগা যেমন সত্য তেমনি এর খারাপ প্রভাবও রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বদনজর লাগা সত্য। (আবু দাউদ, হাদিস: ৩৮৭৯)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন- তোমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো। কেননা বদনজর সত্য বা বাস্তব ব্যাপার। (ইবনু মাজাহ, হাদিস: ৩৫০৮)

এমনকি পবিত্র কুরআনেও বদনজরের বিষয়টি এসেছে, ইরশাদ হয়েছে- ‘কাফিররা যখন কুরআন শুনে তখন তারা যেন তাদের দৃষ্টি দিয়ে তোমাকে আছড়ে ফেলবে। আর তারা বলে, সে তো অবশ্যই পাগল।’ (সুরা কলম, আয়াত: ৫১)

মূলত বদনজর হলো কারও হিংসাত্মক দৃষ্টির কুফল। এ ক্ষেত্রে কারও হিংসাত্মক দৃষ্টির ফলে কোনো ব্যক্তির বা বিষয়ের ভালো অবস্থা থেকে ঘটলে এমনটা বদনজরের কারণে হয়ে থাকতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে এমনটা বেশি দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ভালোমতো খাওয়া-দাওয়া করা কোনো শিশুকে কেউ যদি হিংসাত্মক দৃষ্টিতে দেখে, সে ক্ষেত্রে প্রায়ই ওই শিশুর খাবার খেতে অনীহার মতো বিষয় দেখা যায়।

এ ক্ষেত্রে প্রচলিত একটি কথা প্রায়ই শোনা যায় যে, বদনজর লাগলে সোনা বা রূপা ধৌত করা পানি খেলে বা সেই পানি দিয়ে গোসল করলে বদনজর কেটে যায়। আবার কেউ কেউ বদনজর কাটাতে পশুর হাড় ঝুলিয়ে রাখেন। তবে শরিয়তে এমন সবকিছুর ভিত্তি নেই।

ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহর মতে, কারও বদনজর লেগেছে এমনটা নিশ্চিত হলে দুইভাবে মূলত বদনজর কাটানো যায়। এরমধ্যে একটি হলো যার বদনজর লেগেছে কোনোভাবে তার শরীর নিসৃত পানি (হাত ধোয়, গোসল করা পানি ইত্যাদি) সংগ্রহ করে যার ওপর বদনজর লেগেছে তার ওপর প্রয়োগ করা। অর্থাৎ, সেই পানি দিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নেয়া বা গোসল করা।

এছাড়া অন্যটি হলো- বিশেষ কোনো দোয়া বা কুরআনের আয়াত পাঠ করা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটি করা যেতে পারে সেটি হলো- সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করা। এ ক্ষেত্রে কোনো পানিতে এই দুই সুরা পড়ে ফুঁ দিয়ে সেই পানি দিয়ে যার ওপর বদনজর লেগেছে তার শরীর ধুয়ে নেয়া যেতে পারে।

এর বাইরেও বদনজর কাটাতে বিভিন্ন দোয়া পড়া যেতে পারে। সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এমন একটি দোয়ার কথা এসেছে। যার মাধ্যমে জিবরিল (আ.) নবীজিকে (সা.) ঝাড়ফুঁক করেছিলেন।

সহিহ মুসলিমে আসা হাদিসটি হলো- একবার জিবরিল (আ.) রাসুল (সা.) এর কাছে এসে বললেন, ইয়া মুহাম্মদ! (সা.) আপনি কি অসুস্থতা বোধ করছেন? জবাবে নবীজি বললেন, হ্যাঁ। পরে জিবরিল (আ.) বললেন-

بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ

বাংলা: বিসমিল্লাহি আরক্বিকা মিন কুল্লি শাইয়্যিন ইয়্যুজিকা মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসাদিন, আল্লাহু ইয়াশফিকা, বিসমিল্লাহি আরক্বিকা।

অর্থ: আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি- সেসব জিনিস থেকে, যা আপনাকে কষ্ট দেয়, সব প্রাণের অনিষ্ট কিংবা হিংসুকের বদনজর থেকে আল্লাহ আপনাকে শিফা দিন, আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৫৫১২)

জনপ্রিয়

মোহাম্মদপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনায় অসদাচরণের বিষয়ে পুলিশের ‘দুঃখ প্রকাশ’

বদনজর লাগছে কীভাবে বুঝবেন? করণীয় কী?

১০:৪২:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫

সিবিসি নিউজ ডেস্ক।। 

ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী মুমিনের জন্য পরীক্ষার হলের মতো। পরকালে সফল হতে অবশ্যই এই পরীক্ষায় সফলকাম হতে হবে। এরপরই মিলবে কাঙ্ক্ষিত জান্নাত। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘জমিনের ওপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোর শোভাবর্ধন করেছি, যাতে আমি মানুষকে পরীক্ষা করতে পারি যে, আমলের ক্ষেত্রে কারা উত্তম।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত: ৭)

অনেক সময় নানা ধরনের বিপদ-আপদের মাধ্যমেও মহান রাব্বুল আলামিন বান্দার পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। কখনো এটি হতে পারে শারীরিক কোনো রোগ-ব্যাধি দিয়ে, আবার কখনো জীবন বা সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে। এ জন্য পরকালে সফল হতে মহান আল্লাহর হুকুম যেমন মেনে চলা জরুরি, তেমনি রাসুল (সা.) এর আদর্শ ও তাঁর দেখানো পথ অনুসরণও জরুরি।

এ ক্ষেত্রে বদনজর লাগা যেমন সত্য তেমনি এর খারাপ প্রভাবও রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বদনজর লাগা সত্য। (আবু দাউদ, হাদিস: ৩৮৭৯)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন- তোমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো। কেননা বদনজর সত্য বা বাস্তব ব্যাপার। (ইবনু মাজাহ, হাদিস: ৩৫০৮)

এমনকি পবিত্র কুরআনেও বদনজরের বিষয়টি এসেছে, ইরশাদ হয়েছে- ‘কাফিররা যখন কুরআন শুনে তখন তারা যেন তাদের দৃষ্টি দিয়ে তোমাকে আছড়ে ফেলবে। আর তারা বলে, সে তো অবশ্যই পাগল।’ (সুরা কলম, আয়াত: ৫১)

মূলত বদনজর হলো কারও হিংসাত্মক দৃষ্টির কুফল। এ ক্ষেত্রে কারও হিংসাত্মক দৃষ্টির ফলে কোনো ব্যক্তির বা বিষয়ের ভালো অবস্থা থেকে ঘটলে এমনটা বদনজরের কারণে হয়ে থাকতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে এমনটা বেশি দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ভালোমতো খাওয়া-দাওয়া করা কোনো শিশুকে কেউ যদি হিংসাত্মক দৃষ্টিতে দেখে, সে ক্ষেত্রে প্রায়ই ওই শিশুর খাবার খেতে অনীহার মতো বিষয় দেখা যায়।

এ ক্ষেত্রে প্রচলিত একটি কথা প্রায়ই শোনা যায় যে, বদনজর লাগলে সোনা বা রূপা ধৌত করা পানি খেলে বা সেই পানি দিয়ে গোসল করলে বদনজর কেটে যায়। আবার কেউ কেউ বদনজর কাটাতে পশুর হাড় ঝুলিয়ে রাখেন। তবে শরিয়তে এমন সবকিছুর ভিত্তি নেই।

ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহর মতে, কারও বদনজর লেগেছে এমনটা নিশ্চিত হলে দুইভাবে মূলত বদনজর কাটানো যায়। এরমধ্যে একটি হলো যার বদনজর লেগেছে কোনোভাবে তার শরীর নিসৃত পানি (হাত ধোয়, গোসল করা পানি ইত্যাদি) সংগ্রহ করে যার ওপর বদনজর লেগেছে তার ওপর প্রয়োগ করা। অর্থাৎ, সেই পানি দিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নেয়া বা গোসল করা।

এছাড়া অন্যটি হলো- বিশেষ কোনো দোয়া বা কুরআনের আয়াত পাঠ করা। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি যেটি করা যেতে পারে সেটি হলো- সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করা। এ ক্ষেত্রে কোনো পানিতে এই দুই সুরা পড়ে ফুঁ দিয়ে সেই পানি দিয়ে যার ওপর বদনজর লেগেছে তার শরীর ধুয়ে নেয়া যেতে পারে।

এর বাইরেও বদনজর কাটাতে বিভিন্ন দোয়া পড়া যেতে পারে। সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এমন একটি দোয়ার কথা এসেছে। যার মাধ্যমে জিবরিল (আ.) নবীজিকে (সা.) ঝাড়ফুঁক করেছিলেন।

সহিহ মুসলিমে আসা হাদিসটি হলো- একবার জিবরিল (আ.) রাসুল (সা.) এর কাছে এসে বললেন, ইয়া মুহাম্মদ! (সা.) আপনি কি অসুস্থতা বোধ করছেন? জবাবে নবীজি বললেন, হ্যাঁ। পরে জিবরিল (আ.) বললেন-

بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ

বাংলা: বিসমিল্লাহি আরক্বিকা মিন কুল্লি শাইয়্যিন ইয়্যুজিকা মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসাদিন, আল্লাহু ইয়াশফিকা, বিসমিল্লাহি আরক্বিকা।

অর্থ: আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি- সেসব জিনিস থেকে, যা আপনাকে কষ্ট দেয়, সব প্রাণের অনিষ্ট কিংবা হিংসুকের বদনজর থেকে আল্লাহ আপনাকে শিফা দিন, আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৫৫১২)