
ঈদগাঁও উপজেলার বেসরকারি চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান ঈদগাঁও মেডিকেল সেন্টার এন্ড হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সের অবহেলার কারণে সোহানা (১) নামে এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। নিহত শিশু জালালাবাদ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড, পূর্ব লরাবাক এলাকার আব্দু শুক্কুরের ছেলে মোহাম্মদ শাকিবের একমাত্র কন্যা।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার (১২ জুলাই) সামান্য সর্দি-কাশি নিয়ে শিশুটিকে বর্নিত হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নজরুল হকের কাছে নিয়ে যান বাবা-মা। ডাক্তারের দেওয়া প্রেসক্রিপশনে ওষুধ সেবনের পর শিশুটির শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হলে পরদিন (১৩ জুলাই) আবারও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এদিন ডাক্তার শিশুকে ইনজেকশনের মাধ্যমে Eryxion 1g (Ceftriaxone) নামক একটি অ্যান্টিবায়োটিক প্রদানের নির্দেশ দেন।
শিশুটির পরিবার জানায়, ফার্মেসি থেকে ইনজেকশনটি সংগ্রহের পর হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স জোৎনা আক্তার তা মাত্র ৫–১০ সেকেন্ডের মধ্যে দ্রুত পুশ করে দেন, যা শিশুর হাতে ফোলাভাব সৃষ্টি করে। এরপরও নার্স শিশুটির পরিবারকে এটা সাধারণ বিষয় বলে বাড়ি পাঠিয়ে দেন।
কিন্তু হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে শিশুটির শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতি হতে থাকে। শুরু হয় খিঁচুনি। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় শিশুটিকে আবারও দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শিশুটির বাবা-মা অভিযোগ করেন, সামান্য সর্দি কাশি ছাড়া তাদের সন্তানের তেমন কোনো জটিলতা ছিল না। নার্সের অদক্ষতা ও ইনজেকশন দ্রুত প্রয়োগের কারণেই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে নার্স জোৎনা আক্তার বলেন, “আমি অন্য রোগীদের যেভাবে ইনজেকশন দেই, শিশুটিকেও সেভাবেই দিয়েছি। কোনো গাফিলতি করিনি। ইনজেকশনের সময় শিশুটির অবস্থাও ভালো ছিল।”
তবে ঈদগাঁও’র আরও একটি বেসরকারি হাসপাতালের একজন এমবিবিএস ডাক্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন , Eryxion 1g ইনজেকশন দ্রুত পুশ করা কোনো রোগীর ক্ষেত্রেই নিরাপদ নয়। এ ধরনের ওষুধ ১০–২০ মিনিট সময় নিয়ে ধীরে প্রয়োগ করতে হয়। দ্রুত প্রয়োগ করলে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হতে পারে, এমনকি রোগীর প্রাণহানিও হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, অদক্ষ, ট্রেনিংবিহীন নার্সদের এ ধরনের চিকিৎসায় যুক্ত করা অত্যন্ত বিপজ্জনক। প্রতিটি হাসপাতালে সনদপ্রাপ্ত ও অভিজ্ঞ নার্স রাখার বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত।
শেষমেশ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ এহছান প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে জানান, আপনারা এটিকে কোনোভবে ম্যানেজ করে ফেলেন যা যা প্রয়োজন হয় আমরা ব্যাবস্থা নিব।
সর্বশেষ নিহত শিশুটির পরিবার কতৃক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান স্বজনরা।